অযাচিত বিপত্তি

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

মামুন ম. আজিজ
  • ৩৫
  • 0
  • ১০০
এক.
খোলা আকাশ। হঠাৎ দৃশ্যমান হলো একটি রূপালী দুয়ার । দুই পাল্লার ঘন কারুকাজ। চোখ জুড়িয়ে গেলো। ওপাশে আঁধার, এপাশে আঁধার - আঁধার দুয়ারের চারপাশ ঘিরে।
খুলে গেলো রূপালী দুয়ার। দূরে দূরে তারাগুলো মিটিমিটি হাসছে। বড্ড দুষ্টু। হঠাৎ করে দজার এপাশে বেড়ে যেতে শুরু করল তারাদের হাসি। বেড়েই চলেছে।
রূপালী দুয়ারের খোলা অংশ দিয়ে উড়ে আসছে দুটো হাঁস। লাল-হলুদের ঠোঁট, স্বর্গ-সবুজের সাথে ময়ুরকণ্ঠী নীলের মিশ্রনে গড়া পালকে মুড়ে আছে সাড়া দেহ। কালো লেজের আগাগুলো তীক্ষ্ম, লম্বা। তারাগুলো ঢেকে ঢেকে চলার সময় সেটুকু বোঝা যাচ্ছে, না হলে মিশেই থাকছে আঁধার আকাশের রাতে।
হাসি মুখে দুয়ার পেরিয়ে উড়তে উড়তে এপাশে চলে এল কপোত কপোতি। রূপালী দুয়ার চোখের নিমিষে চুপষে এক বিন্দু হয়ে নিচে নেমে কুয়াশার সাথে মিশে গেলো। স্ত্রী হাঁসটি সেই বিন্দুর দিকে তাকিয়ে থাকল অবিচল। পুরুষ হাঁসটি সঙ্গিনীর সে বিস্ময়ে মুহূর্তে পুলকিত। পুরুষ হাঁস যতদূর চোখ যায় নিচে তাকিয়ে দেখল। কুয়াশার স্তর সিঁড়ির মত নেমে গেছে। স্ফীত হলো তার গর্বিত বুক - দেখেছ প্রিয়া- বলেছিলাম না এ দেশে এখন শীতের শুরু। চল ঐ যে জলাশয় নিচে, নিরিবিলি সবুজে ঘেরা। তারার আলোয় জলাশয় ঘিরে থাকা গাছের পাতাগুলোর ঘুম ঘুম সুখছায়া নড়ে ওঠে জলাশয়ের জলে। একটু সামনে এগুলেই বিলের মাঝে আঁধার খেয়ে রাত পার করে সর্ষে ক্ষেত, এই পুরো বাঙলার শীতে তুমি আমি মধুচন্দ্রিমায় মেতে রব এখানে। উড়ব হলুদ সর্ষে ক্ষেতের উপর রঙিন পাখার সাদা-কালো ছায়া ফেলে ।
স্ত্রী হাঁসটি শুনছিল আর চোখদুটো মেলে ধরে নেমে আসছিল ধরনীর কুলে প্রিয় হাঁসের সাথে পাখনা মেলে তালে তালে। হঠাৎ বিস্মিত হয়ে ওঠে - এমা! এ কি শীতকাল এদেশে? তবে এই রাত নিশিতে ঐ যে নিচে ওরা কারা...ওরা কি মানুষ নয়?
কেনো কেনো কি হলো? মানুষতো বটেই এবং এরা শুনেছি খুবই বন্ধুবৎসল, এরা মাটির মানুষ। এখনে সোঁদা মাটির গন্ধে প্রাণ জুড়ায়। নামলেই বুঝবে।
আরে তা না, শীত কি এদের ছোঁয়না? এদেরতো পশম নেই। তবে কেনো খালি গায় এই এত রাত গভীরে?
কই কই!
ঐ যে দেখো ঐ যে টিনের চাল, বাঁশের বেড়া। ঐ ছিদ্র দিয়ে দেখ। ঘরের ভেতর সবুজ আলো। দেখ দেখ, ঐ নারী আর পুরুষ বিছানায় শুয়ে আছে। গায়ের কাপড়গুলো ঐ তো বিছানার এক কোনে। উদাম দেহে জড়াজড়ি, ঘুমের ঘোর।
ছিঃ ওরা তো প্রেমিক। প্রেমের আলিঙ্গন। প্রেমের উন্মাদনা, বস্ত্র ওখানে অতি তুচ্ছ।
তবে ঐ মানুষ! গভীর রাতেও ঘুম নেই তার। ঐ যে একটা বাড়ী পড়েই তো। একা একা গর্ত খুঁড়ছে। কালো শরীরটা চকচকে বেশ। কাপড় নেই গায়। শীত লাগেনা তার?
আরে এ ব্যাটাতো চোর মনে হচ্ছে। চোরই তো। সিঁদেল চোর। গায়ে তেল মেখেছে। সর্ষের তেল। ধরা পড়লে পিছলে যাবে। দারিদ্রতা এ দেশটার বড় সমস্যা এখনও।
আর ঐ যে বাস স্ট্যান্ডের টং টোকানটার ভাঙা বেঞ্চে শুয়ে আছে। ও বেচারও কি চোর?
আরে না না, ও তো কাঁপছে। বেচার তো কাঁপতে কাঁপতেই মরবে। বেচারার নিশ্চয় কোন কাপড়-চোপড় নেই।
চল না আমরা পালক দিয়ে তারাগুলো জুড়ে ওর জন্য একটা চাদর বানিয়ে দেই ।
তারাগুলো সব দুলছে। বেঞ্চে শুয়ে থাকা ছেলেটা আরও কাঁপছে। বেঞ্চ থেকে পড়ে যাচেছ...
...চোখ মেলে তাকাল চঞ্চল। চোখ লেগে এসেছিল। কন্ডাকটর কাঁধে হাত দিয়ে ঝাকাচ্ছে। ব্যাগটার উপর হাত গেলো আগে। ঠিক আছে। কেউ টানদিলে সে টের পাবে। কাঁধে ঝুলানো থাকেই। এত দামী ক্যামেরা, যতই তন্দ্রা আসুক, মনের একটা অংশ ক্যামেরা ঠিকই পাহরা দেয়।
বুক পকেট থেকে টাকা বের করে ভাড়া দিতে দিতে বাইরের দিকে তাকাল। সূর্য উঠে রোদেলা হাসি ছোটাতে ব্যস্ত। যদিও কুয়াশা বাধা দিচ্ছে। বিলের ওপাশটা দেখা যাচ্ছে না। কানের কাছে শীতের দুষ্টু বাতাস কাতুকুতু দিয়ে যাচ্ছে। জানালার কাচটা ঠিক থাকলে এই কাতুকুত সহ্য করতে হতো না। তাড়াহুড়ায় মাফলারটা নিয়ে আসতে মনে নেই। যখন বাসে উঠেছিল তখনও সূর্য পুরো জাগেনি। ভোর-কুয়াশার অবিচ্ছেদ্য দখল জুড়ে ছিল দৃষ্টির সীমানা।
মোবাইলের এলার্মটা রাতেই দিয়ে রেখেছিল। শুক্রবারেও মুক্তি নেই। শ্রীনগর শ্বশুর বাড়ী বেড়াতে এসেছে। দুদিন তেমন কাজের চাপ ছিলনা। এডিটর সাহেব ছুটি দিতে কার্পন্য করেননি। অথচ রাত গভীর হবার আগেই অফিস থেকে একটা ফোন চলে এল। বিদেশ থেকে একজন পাখি বিশেষজ্ঞ এসেছেন। আর পাখি বিষয়ে অগাধ আগ্রহ চঞ্চলের সেই কলেজ জীবন থেকে। ফটোসাংবাদিক হওয়ায় দুটো শখ মিলেমিশে একাকার এখন। এডিটর সাহেব জানেন। জানেন বলেই চঞ্চলের ডাকতো পড়বেই। বিদেশি বিশেষজ্ঞ আর সাথে বাংলাদেশী পাখি পর্যবেক্ষখ একটি টীম শীতের পাখি গননা করবে মিরপুরের ওপারে বাধের ধারে এবং বোটানিক গার্ডেনের ঝিলে। বড় অদ্ভুত সুন্দর পাখির পিছনে ছোটার এই বিষয়টি। সুদূর সাইবেরিয়া থেকেও বাংলার বুকে ঝিলে বিলে ছুটে আসে শীতের হাসগুলো। মাইগ্রেটরি বার্ডস। নানান রঙের। স্বর্গের রং তুলিতে যেন আঁকা। চঞ্চল বারবার মুগ্ধ হয়। মুগ্ধ হয় তার ক্যামেরার লেন্স।
বউ একটু রাগ করা শুরু করেছিল। অনেকদিন শ্রীনগর আসেনি চঞ্চল। প্রায় বছরখানেক। এতদিন পরে এল তাও কাজ পিছু ছাড়লনা। ছেলেটা নানির কাছেই শুয়ে পড়েছিল। বউয়ের অভিমান ভাঙাতে ভাঙাতে খুনশুটির শুরুতে শীতের এক পশলা বাতাস খোলা জানালা দিয়ে ঢুকে পড়তেই দুটো ঠোঁট এক হয়ে ওঠে। ঠোঁট থেকে হাত, হাত থেকে বুক তারপর পুরো দেহ। গ্রামের সোঁদা গন্ধে মন মাতোয়রা হয়, যৌনতা তো পেয়ে বসবেই। প্রেমের পূর্নতা শেষে ঘুমিয়ে পড়েছিল দম্পতি।
এলার্ম বাজার পর বউটার খোলা শরীরের উপর কম্বলটা ভাল করে ছড়িয়ে সেই রাত ভোরেই বের হয়ে পড়ে। বেরিয়েই শীতে ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করেছিল চঞ্চল।

...মুচকি একটা হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে চঞ্চলের ঠোঁটে। বাতাসে শুকিয়ে কাঠ হয়েছে ঠোটঁ। ভাবল- কি অদ্ভূত স্বপ্ন ছিল! তারপর জানালার বাইরে কুয়াশায় ভেজা পথ-পাশর্্ব গাছগুলো দেখতে দেখতে আবার বাসের ঝাকুনিতে ঝিমুতে শুরু করল।

দুই.
ভোরে এখনও যানজট আধিপত্য বিস্তারের অতটা সুযোগ পায়না। হয়তো পাবে নিকট ভবিষ্যতেই।
চঞ্চল সময় মতোই পৌঁছে গিয়েছিল মিরপুর। একটা হোটেলে ঢুকে দুটো পরোটা আর ডাল ভাজি গিলেই ছুটে যায় বাধের ধারে বট গাছটার নিকট। পুরো দলকে ওখানেই পেয়ে যায়। অনেকেই চেনে তাকে। তাদের সাথে ঘুরে ঘুরে সারাটা সকাল ভালোই কেটেছে। পিনটেইল আর লেসার হুইসলিংটিল জাতের হাঁস এসেছে বেশি। লেসার হুইসলিংটিলকে ট্রি ডাকও বলা হয়। উজ্জ্বল বাদামী পালক সারা দেহে। আর পিনটেইলের সৌন্দর্যের বিশেষণে তীক্ষ্ম লেজটাইতো যথেষ্ট। আরও কিছু অন্য প্রজাতির হাঁসও ছিল। সে সব হাঁসের সব সুন্দর সুন্দর ছবিতে ভরে গেছে ক্যামেরার মেমোরি।
ভেবেছিল দুপুরের আগে বাসায় পৌঁছে যাবে। বাসাটা সিপাহী বাগ। ছয়তলা গলি। একটা ছয়তলা বিল্ডিংয়ের দুতলায় ছোট একটা বাসা। বউ আর ছেলেকে নিয়ে সেখানেই চঞ্চলের বসবাস। ভেবেছিল বাসায় গিয়ে গরম পানি করে গোসল করবে। সব ক্লান্তি দূর হবে। তারপর জুম্মার নামাযটা পড়ে এসে ছবি গুলো ল্যাপটপে ঢুকিয়ে এডিটর কে দরকারী ক'টা মেইল করবে। প্রেস ক্লাবে একটু ঢু মেরে বিকেলে রওয়ানা দেবে শ্রীনগরের উদ্দেশ্যে। রাত সাতটা আটটা নাগাদ পৌঁেছ যাবে। বউকেও ফোন করে সেভাবে জানিয়েছে। তাদের একমাত্র ছেলেটার আবার এ বয়সেই শীতকালীন এ্যাজমা শুরু হয়েছে। বারবার তার খোঁজ নিতে মন চায়। গ্রামের ধূলাবালি আর ঠান্ডার প্রকোপ থেকে ওকে দেখে রাখতে বলে।
যানজটের জ্বালায় কি আর পরিকল্পনাগুলোর আলোর মুখ দেখার জো আছে? নামাযটা বোধহয় আজ আর তার পড়া হবেনা। জুম্মার নামায তার খুব কমই বাদ যায়। যখন বাস থেকে মালিবাগ নামল তখনই বাজে সারে বারোটা। এখন শীত অনেকটা কমেছে। মোটা জ্যাকেটটা খুলে কোমরে বেঁেধছে অনেক আগেই। রোদ এসেছে। এ যে শীতের রোদ। এর মাঝে এক আলাদা মৌনতা। মিষ্টি রোদ বোধহয় একেই বলে। হালকা শৈত্য কিন্তু ঠিকই বইছে। ক্ষণে ক্ষণে পলকা হাওয়ায় খোলা চামড়ায় নাড়া লাগে।
একটা রিকশার ভাড়া জিজ্ঞেস করতে থাকে চঞ্চল। হাড় লিকলিকে এক তরুন ছুটে আছে। খালি গা। হাত পাতে। স্বপ্নের কথা মনে পড়ে চঞ্চলের। মানিব্যাগ থেকে বের করে বিশ টাকার একটা নোট এগিয়ে দেয়। রিকশা ওয়ালা কি আর ভাড়া কমায়! এতটুকু চতুরতা না থাকলে ঢাকার রিকশাওয়ালা হওয়া যায়না। চঞ্চলের মাঁেঝ সে এখন দয়ার ভাব দেখেছে। চঞ্চলও কোন কথা না বলে যে ভাড়া চাইল তাতেই রাজি হয়ে উঠে পড়ল। শুধু বলল, একটু জলদি যাও।
তাড়া থাকলে মনে হয় রিকশা বড্ড আসতে চলছে। প্যাডেলের দিকে বারবার চোখ পড়ার কারনই সম্ভবত এ ধরনের ডিলিউশন হয়। এ তত্ত্ব চঞ্চল তার স্ত্রীকে একদিন শুনিয়েছিল। এখন তার তাড়া। তাড়া থাকা মন তত্ত্ব কথা মানবে কেনো? ঘড়িটাও চলছে মারাত্মক দ্রুত। ছুটির দিনের রাস্তা ফাঁকা হবার সুবিধা এখন পাচ্ছে সে। কিন্তু ওমা! বলা নাই কওয়া নেই, রিকশাওয়ালা সাইট করে থামল; তাও সেই মাজারটার সামনে। এ এলাকায় সেই ছোটবেলা থেকে তার বসবাস। লাল কাপড়ে ঢাকা কবরটা থেকে হঠাৎ পাকা দালান, উপরে উঁচু গম্বুজের নিচে নিরেট আস্তনা সবই চোখের সামনে গড়ে উঠেছে তার। একবার কয়েকবার ছবি তুলে এডিটরকে দিয়েছিল। রিপোর্ট করতে বলেছিল। উপাত্তও লিখে দিয়েছে। সাহস পাননি এডিটর। চঞ্চল কারন জানে। তবুও তুলেছে - মনের ক্ষুধা মিটেছে।
ওরা ওটাকে সিদ্ধি বলে। তার পরিচতি মহল্লার বন্ধু অনেকেই সংগ্রহ করে পাশের গলি থেকেই সেই সিদ্ধি বা গাঁজা। কঁটু গন্ধ এখনও নাকে আসছে। টাইলস লাগানো উঠানে তিনজন মানুষ শুয়ে আছে। ভয়াবহ নোংরা পোষাক গায়। সম্ভবত এরা এ জীবনে গোসল করেনা। মাথায় জট। দেখে মনে হয় সিদ্ধি খেয়ে কাতর, তাই বিশ্রামে মগ্ন।
রিকশাওয়ালা নেমেই - স্যার একটু আসতাছি- বলে লাল কাপড়ে মাথা ঢাকা এক জটাধারীর কাছে এগিয়ে গেলো । হাতে তার ৫০টাকা গুজে দিয়ে কবরটার উদ্দেশ্যে চুক চুক শব্দে কয়েকবার হাত বাড়িয়ে চুমু খেলো।
জটাধারী সম্ভবত খাদেম। একটা তাবিজের মত কিছু এগিয়ে দিলো রিকশাওয়ালাকে। চঞ্চল একবার ঘড়ির দিকে তাকায় আরেকবার কান্ডগুলো দেখে। সে হতভম্ব। মানুষ এত নিবের্াধ কেমন করে হয়। বছর দশেক আগে কোথেকে এক থুড়থুড়ে অর্ধমৃত বুড়োকে এনে আস্তানা গাড়া হলো লস্বা লম্বা চুল। হাত পায়ের লম্বা লম্বা নখ। অর্ধমৃত বলে আসলে কিছু নেই। কিন্তু সে ব্যাটা অর্ধমৃতই ছিল। থাকত একদল সাগরেদ পরিবেষ্টিত। সে ছিল নাকি - পীর। সেই ততাকথিত পীর অর্ধ থেকে পুরো মৃত হলো মাসখানেকের মধ্যেই। তারই কবর ওটা।
আই তুমি আমারে না বলেই নেমে গেলা। আমার না বললাম তাড়া আছে। আর এসব কি? কবরে থাকে মরা মানুষ। মরা মানুষের কোন ক্ষমতা থাকে নাকি। তার কাছে কিসের প্রার্থান, কিসের ভক্তি? তার কাছে কিছের সাহায্য?
স্যার, মাইয়্যাডার জ্বর। হের মায় মানত করছে - মাজারে ৫০টাকা দিবো।
ডাক্তার দেখাও!
আমগো গরীবের লাইগ্যা এইডাই ডাক্তার। আমরা গরীবতো হের লাইগ্যা আমাগো উছিলা লাগে মুক্তির লাইগ্যা। খাজা বাবা সেই উছিলা। আল্লায়তো আপনেরে শিক্ষা দিছে, টাকা দিছে, কই আমাগো তো দেয় নাই। তাইলে আমাগো আর আপনাগো নিয়ম এক হইবে কেন, কন?
কি আজব যুক্তি! চঞ্চল আর কথা বাড়ায়না। একটা বেজে গেছে। রিঙ্া চালাতে বলে।
কিন্তু মাথায় একটু রক্ত চড়েছে। এইসব মাজার পূজোতে তার বড্ড এলার্জি। আর তার সাথেই সব সময় ঘটে এইসব বিপত্তি।
মনে পড়ে আজও বারবার। মুখোমুখি জানালায় ওপাশের বিল্ডিংটাতে ভাড়া থাকত শিউলিরা। মুখোমুখি ঘরটাই ছিল শিউলির। প্রচন্ড রক্ষনশীল পরিবার তাদের। মুখোমুখি জানালা হলেও সে জানালা চঞ্চলের জন্য উন্মুক্ত হতনা সচারাচর। সেটাও হয়তো জাগাত একটা বাড়তি আকাঙ্খা । সেটাই হয়তো প্রেমের সূচনায় অনুঘটকের কাজ করেছে। অনেক সুন্দরী ছিল শিউলি। বউ হবার পরে কমেনি একটুও। মা হবার পরেও নয়। জানালা দুএকবার খুলে যাওয়ায় সেই বলিহারি রূপ দেখে একজন ফটোগ্রাফারের চোখের লেন্সে বাড়তি সুখ সৃষ্টি হয়। সে কি আর না মজে পারে। মজেছিল শিউলিও। সেসব কখন কেমনে হয়ে গেলো বোঝাই যায়নি। অঝুঝের মত না হলে বোধহয় ঠিক প্রেম হয়না।
তারপর ওদের বাসায় কি যেন হলো। কদিন আর শিউলির কোন খোঁজ নেই। জানালাও দুর্গের দরজার মত বন্ধ হয়ে গেলো, যেন এপাশে মহা শত্রুর অবস্থান। শিউলি চুপচাপ থাকত বাসায় তখন। বাবাকে প্রচন্ড ভয় পেত। মা বোঝায়। বাবার ভয় দেখায়। খালারা ছেলের খোঁজ দেন। শিউলি বিয়েতে রাজী হয়না। শিউলি কারও সাথে কথা বলেনা। মনমরা থাকে। বাবার কানে গেলো। ওর বাবা পুরান ঢাকার কাপড় ব্যবসায়ী। পাটুয়াটুলী কাপড়ের দোকান। ওখানে কয়েকটা দোকান মানেই আর্থিক অবস্থার রমরমা ভাব সেটা আর বলে দিতে হয়না। কিন্তু মনগুলো তাদের অর্থ বৈভবের মত বিকশিত হযনি। আর সেকারনেই মেয়েকে দেখানোর জন্য নিয়ে গেলেন পুরান ঢাকায় এক ফকীরের কাছে।
সে নিয়ে দু'জনার কত হাসাহাসি। ততদিনে ভন্ডামীতে অবিশ্বাস আনার শিক্ষা অনেকটাই শিউলির মাথায় ঢুকাতে পেরেছিল। সেটা সম্ভব হয়েছিল প্রবল প্রেম স্রোতের টানে। কিন্তু বাবার আগ্রাসী আদেশ অমান্যও সে করতে পারেনি। ফকীর হাত ধরে দেখতে চায়। শিউলি রাজী হয়না। বাবার এক ধমকে রাজী না হয়েও উপায় থাকেনি। সে ধকমের এমনই তেজ। সে তেজে হাত কেনো মুখের নেকাবও খুলতে বললে হয়তো খুলে দেখাতে হত। কিন্তু ফকীরগুলোও অত বোকা না। ব্যবসায়ীদের টাকায় পেট পুজো হয়, ভন্ডামী কি সীমা ছাড়াতে পারে? চঞ্চল হাত ধরার খবর শুনে তীব্র রাগ দেখিয়েছিল। সেই রাগই সাহস জুগিয়েছিল শিউলিকে। সেই রাগই জুড়েছিল দুটো প্রান প্রনয়ের বন্ধনে।
রিকশা ওয়ালা চঞ্চলের অতীত রোমন্থনে ছেদ আনে - স্যার, হিরোইনচিডারে বিশ টাকা দিবার পারলেন, আর আমি মানতের লাইগ্যা ৫০টাকা মাজারে দিরাম এইটা লাইগ্যা চ্যাতলেন। আপনেরা পারেনও বটে?
মেজাজটা আবার বিগড়ে গেলো চঞ্চলের। বলল, ঐ থাম। এই মসজিদটার সামনে থাম। চল নামায পড়ে আসি।
স্যার, আমরা গরীব মানুষ। আমগো আবার নামায! রিকশা থুইয়্যা যামু আর যাইব লগে লগে লইয়্যা। পেটের ধান্দায় নামাযের সময় গরীবের হয়না স্যার।
নামাযে আবার গরীব আর ধনী কিরে? আল্লাহ তো নামায পড়তে বলেছে সবাইকে।
ও স্যার আপনারে বুঝাইতে পারুমনা। আমি তেনার ভক্ত। হেই আমাগো পীর। হের সুপারিশে আমাগো মুক্তি মিলবোা? স্যার গরীব মানুষের অসুবিধা যেমন সুবিধাও তেমন। আমগো লাইগ্যা সহজ বিচার হইব। খাজা আমাগোর সুপারিশ করব।
দূর! মিয়া, ভন্ড পীরের... তাও আবার মরা - সে তোমার কি সুপারিশ করব। ধান্দা বাজী ছাড় চোখ কান খোল।
স্যার আপনের বিশ্বাসে আপনি থাকেন। আমগোরডা আমগো থাক। দেন, পাঁচটাকা কমই দেন। আমারে ছাইড়া দেন। দিয়া আপনি মসজিদে ঢোকেন।
চঞ্চল মনে মনে ভাবলো, থাক তোর বিশ্বাস তোর থাক। নামায তো গোসল না করে পড়া যাবেনা। অত সকালে বউয়ের উষ্ণ আলিঙ্গন মুক্ত হবার পর তো গোসল না করেই বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল। রিকশাওয়ালে তাই সামনের গলিতে ঢুকতে বলল- চল , ঐতো বাসা কাছেই। চল গলিতে ঢোক। আগে বাসাতেই যাব।

তিন.
গোসল করে বের হবার পর বারান্দা দিয়ে দেখল মহল্লার মসজিদে নামায শেষ। পেটে তখন চো চো করছে। রান্না করে খাবে ইচ্ছে করছেনা। ভাবল থাক - ছবিগুলো পাঠিয়ে একেবারে বের হয়ে বাইরে খেয়ে নিয়ে রওয়ানা হওয়া যাবে।
বেশির ভাগ ছবিই সুন্দর এসেছে। লং শট নেয়ার পরেও পাখির ছবি অধিকাংশই ভালো এসেছে। কি সুন্দর পাখিগুলো। তুলতুলে শরীর।
সেদিকে তাকাতেই ছেলের কথা মনে পড়ে যায়। ইস! ঠান্ডায় কিযে করছে? পাখিগুলো ঠান্ডা পানিতে সাঁতার কাটছে। তার কলিজার টুকরো ছেলেটার ঠান্ডায় সমস্যা। একটু শীত বাড়লেই শ্বাস কষ্ট হয়। ডাক্তার বলেছে বয়স হতে হতে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঠান্ডা লাগানো যাবেনা। খুব সাবধানে রাখতে হয় শীতকালে। কিযে করছে গ্রামে? মনটা উচাটনে ভারাক্রান্ত হয়। শিউলির ফোনে রিং হচ্ছে কিন্তু সে ধরছেনা। ফোন রেখে কোথায় গেলো? দূর!
প্রয়োজনীয় ছবিগুলো এডিটরকে মেইল করে উঠল চঞ্চল। ছেলের জন্য মন বেশি খারাপ হচ্ছে। সকালে দেখাও হয়নি। ল্যাপটপের ওয়ালপেপারে ছেলের মিষ্টি হাসিটার দিকে তাকিয়ে থাকল একনাগাড়ে কয়েক মিনিট। রবিবারে ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট। এত প্রিয় শীত কিন্তু শীতের উপর এখন রাগ হচ্ছে। শীত এলেই ছেলের এই অবস্থা হয়। গত বছরেও বেশ কষ্ট পেয়েছে। নাক বন্ধ হয়ে প্রায় শ্বাসই নিতে পারতনা। এবার তবুও ডাক্তারের পরামর্শ মত চলে একটু ভাল ।
দেরী না করে বেরিয়ে পড়ল ঘরে তালা ঝুলিয়ে। সাথে নিত্য সংগী ক্যামেরার ব্যাগটি নিল কেবল। গুলিস্তানে পৌঁছে রাজধানী হোটেলে খেয়ে নিল । তারপর রওয়ানা দিয়ে দিল বাসে উঠে।

চার.
বাবুবাজার ব্রীজের পর খুব একটা যানজটে পড়ল না। এইসময়টায় জার্নি করা কিঞ্চিৎ বুদ্ধিমানের কাজ। ভালোই হযেছে বের হয়ে। শিউলিকে আরও দু'দুবার ফোন করেছে। ধরেনি। কোথায় গেছে? বিকেল হতে চলল, এতক্ষণ কোথায়?
মন ব্যতিব্যস্ত হয় ছেলের জন্য। জানালার কাচের সাথে চোখদুটো ঠেঁসে ধরে। এক সময় এসব বিলে এইরকম শীতের দিনে সবুজ ধান ক্ষেত দেখা যেত। আর বর্ষায় কালো জল। নৌকা চলত। শাপলা আর পদ্ম ফুটে থাকত। সব ভরাট করে ফেলছে ভূমি আগ্রাসীর দল। শহর বাড়বে। গ্রাম্য প্রকৃতির রূপ কমবে। মানুষ বসবাস করবে। খাবার কোত্থেকে আসবে সে চিন্তা কারও মাথায় নেই। বিলের পর বিল বালু ফেলা হচ্ছে। ক্যামেরার লেন্সের জন্য এক মরুরূপ সৌন্দর্য এই দৃশ্য। বেশ কিছু সুন্দর আলোকচিত্র সিরিজ করেছে এইসব বিলের সে।
সামনে একটা বাজার দেখা যাচ্ছে। এইসব বাজার ঘিরে কিছু গ্রাম এখনও এদিকে টিকে আছে। বিলের পর বিল যেভাবে ভরাট হচ্ছে তাতে মাঝের গ্রামগুলোও একসময় গিলে খাবে। বাস থামল। জানালার ওপাশে চোখদুটোর সামনে একটা মাজারের লালসালু। ঝলমলে কাগজে সাজানো। মানুষের দানের ভারে লালসালু ঝুলে গেছে। ছেলের জন্য সংশয়টা আবার বাড়ে। ঐ ভন্ডপীরের বাড়িতে নিয়ে যায়নিতো? যতই চঞ্চলের সাথে চিন্তায় চেতনায় শিউলি একাগ্র হয়ে উঠুক। জেনেটিক বিশ্বাসের একটা গুপ্ত খনি মনের ভূগর্ভে টিকে থাকতেই পারে। ছেলের গত শীতের সমস্যায় শিউলির মন ভীষন দূর্বল হয়ে যায়। দুশ্চিনায় ডুবন্ত মা নৌকা ডোবা মানুষে মত হাতের কাছে শেষ খড়কুটোও ধরে বাঁচতে চায়। নারীর মন তুলোর মত । জল পেলেই ভারী হয়। হয়তো তার মা ফুঁসিয়েছেন। কিন্তু চঞ্চল মনে প্রাণে চাইছে এমন কিছু না হোক।
বাসস্ট্যান্ড থেকে হাঁটার দূরত্বে তার শশুর বাড়ী। সে দ্রুত এগিয়ে যায়। এখনও বিকেলের শেষ আমেজ রয়ে গেছে প্রকৃতির বুকে। কুয়াশার প্রলেপ সন্ধ্যাকে বরন করতে ছুটে আসতে শুরু করেছে। সূর্যটা সরে গেছে বহু দূর। কেবল হালকা আলোয় পথ দেখাচ্ছে ব্যতিব্যস্ত চঞ্চলকে। সে আলোর সাথে মানুষের মনের বড্ড মিল - তেজ অনেক কিন্তু কাজের শেষ বেলায় শুধু ক্ষীণ হয়ে যায়।

যা ভেবেছিল তাই। শাশুড়ি আর শিউলি ছেলেটাকে নিয়ে গেছে পাশের গ্রামে - সেই কুঁজো ফকীরের বাড়িতে। স্বপ্নে নাকি ওষুধ পায় ঐ ফকীর। পত্রিকাতেও একবার ঐ ভন্ডের নামে রিপোর্ট এসেছিল। তারপর ও ব্যাটা টিকে আছে। মানুষ ঠিকই যাচ্ছে। কবে যে এই মানুষগুলো একটু বুঝতে শিখবে?
সে বুঝাবুঝি হবে পরে। মানুষ এর কোনকালেই শিক্ষা হবে না। কিন্তু তার বউ! তার ছেলেকে নিয়ে ... মানা যায়না। এত গভীর বিতৃষ্ণা যে বিষয়টাতে সেখানেই বারবার আটকে যায় পা। এ কেমন ভাগ্য! সে ছুটতে থাকে। সাথে শশুর বাড়ীর রাখাল ছেলেটা। সে পথ দেখায়। বিলের মাঝে আইল ধরে দু'জন দৌড়ায়।
একসময় পৌঁছে যায় ফকীর বাড়িতে। কুঁজো ফকীকের সত্যি একটা কুঁজ আছে পিঠে। নিজের কুঁজটা কিন্তু সে ঠিক করতে পারলনা!
অনেক লোকের ভীড়। কেউ জিকির করছে। কি উচ্চারন করছে বোঝা যাচ্ছে না। মাথা নাড়াচ্ছে। সে ভীড় এড়িয়ে সামনে একটা উঠোন। এক কোনে উপরে ছামিয়ানা টানানো । নিচে একটা বিশাল কাঠের চেয়ার। চেয়ারটা বিশেষভাবে বানানো হযেছে। কুঁজ নিয়েও ফকীর ঠিকই বসতে পেরেছে। পাশে একটা চিকন বেড়ার ঘর। বেড়ার মধ্যেকার বড় বড় ফাঁক ফোঁকড় গলে দেখা যাচেছ রোগীর চিকিৎসা চলছে। সেদিকে ছুটে যায় চঞ্চল। সে বিস্মিত। সে হতভম্ব। তার ছোট পাঁচ বছরের ছেলেটাকে শুইয়ে রেখেছে একটা মাদুরের উপর। কোমরের নিচে একটা ছোট প্যান্ট। আর সারা গায়ে কোন কাপড় নেই। কি ভয়াবহ। ঠান্ডা মাদুর। শিশিরের আক্রমন! চারদিকে চোখ বুলিয়ে শিউলিকে খোঁজে। চোখে পড়েনা। আর কিছু ভাবার নেই। সে ছুটে যায়। ছেলেকে তুলে নেয় মাদুর থেকে। ছেলেটা কাঁদছে। সারা গায়ে তার কি এক তেল মাখিয়ে রেখেছে। সে কারনেই শীতের অনুভব হয়তো কম। কিন্তু নিউমনিয়া হয়ে যাবে তো, নির্ঘাৎ হয়ে যাবে। শিউলি কি করে পারল? একটু্ও মায়া লাগলোনা। একবারও চঞ্চলের কথা মনে পড়লনা।
ছেলে নিয়ে চঞ্চল বের হয়ে আসতে থাকে। শিউলি ছুটে আসে। বামদিকে একটা বারান্দায় বসে ছিল। একটা শক্ত কালো হাতও এগিয়ে এসে বাঁধা দেয় । সাদা দাঁড়িওয়ালা বয়স্ক একটা লোক। শিউলি ভয়ে নিশ্চুপ।
চঞ্চল চিৎকার করে ওঠে, আমার ছেলে। আপনারা কি পেয়েছেন । কি পেয়েছেনে? পুলিশে দেব । ভন্ড কোথাকার !। এট্টুকুন একটা বাচ্চার সাথে এমন করতে একটুও মায়া হলো না, একটুও না?
ফকীর ধ্যানে ছিল। চোখ মেলে তাকাল।বলল, এমনে চিকিৎসা শেষ না কইরা নিয়া গেলে হিতে বিপরীত হৈব। ক্ষতি হইবো।
শাশুড়ী উঠে এসে বলে, বাবা চিকিৎসাটুকু শেষ করতে দাও। দেখোনা কি হয়।
সেদিকে একটা কঠিন দৃষ্টি মেলে চঞ্চল বলে, শিউলি চলো। এক্ষুনি চল। অনেক বাড় বেড়েছে তোমাদের। ছেলেটাকে কি মেরে ফেলতে চাও? ছেলেতো জ্ঞান হারিয়েছে।
বলতে বলতে গায়ের জ্যাকেটা খুলে ছেলের গায়ে জড়ায় সে। চঞ্চল আর সহ্য করতে পারেনা। ছেলেকে কোলে করে বের হয়ে আসে। ছুটে যায় বাজারের দিকে। ওখানে একটা ডিসপেনসারি আছে। যদি ডাক্তারকে পাওয়া যায়। শিউলি কাঁদতে কাঁদতে পাশাপাশি ছুটে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু তাল মেলাতে খুব কষ্ট হয়। চাদরটা ছুড়ে দিতে চেষ্টা করে । সেটা ধরার খেয়াল চঞ্চলের তখন কই?
চঞ্চল ছেলেকে জড়িযে রাখে, আগলে রাখে বুকের সাথে যতটুকু সম্ভব। শীতসন্ধ্যার শিশিরগুলো ছুটে আসে ছেলেটাকে গিলে খেতে। সে ভীত হয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পন্ডিত মাহী সাজানো গোছানো সুন্দর একটা গল্প...
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১২
মামুন ম. আজিজ মনির মুকুল কাদেরকে অনুসরণ করা যায় সেটা বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে আমিও ১০০% জানিনা। সে কারনে অনেক গবেষণা ছাড়া হঠাঃ সে নির্দেশনা দেয়াটা ঠিক হবেনা। অজ্ঞতা হয়ে যাবে। ...গল্পের একটা সুন্দর বিশ্লেষণ দিলে, চমকিত হলাম। আনন্দ পেলাম
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১২
মনির মুকুল এ সমস্ত ভন্ডরা সাধারণ মানুষের বিশ্বাসটাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে স্বীয় সার্থ হাছিল করে। ৩। যেহেতু সমাজের সব মানুষের সঠিক শিক্ষা না থাকার কারণে তাদেরকে কিছু মানুষকে অনুসরণ করে চলতে হয় তাই ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে কাদেরকে অনুসরণ করা যায় গল্পটির মধ্যে এমন কিছু নির্দেশনা ঘটনার মাধ্যমে অথবা চঞ্চলের ভাবনার আড়ালে তুলে ধরলে আরো ভালো হতো। গল্পের প্রেক্ষাপট অত্যন্ত সুন্দর। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট বেছে নেয়ার জন্য মামুন ভাইকে আরো একবার ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১২
মনির মুকুল ১। চঞ্চলের নামাজ সম্পর্কিত আগ্রহবোধের প্রসঙ্গটা যুক্ত করার জন্য গল্পকারকে বাড়তি ধন্যবাদ। এই বিষয়টা সম্পৃক্ততার প্রয়োজন আছে। কারণ এটা তার বিশ্বাসের সুক্ষ্মতা এনে দেয়। নামাজের প্রসঙ্গটা না থাকলে পাঠকরা তার (চঞ্চলের) বিশ্বাসকে ভিন্নভাবে নিয়ে যেত। ২। মাজারকেন্দ্রিক আরাধনা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আমাদের সমাজে শুধু মাজারে নয়, জীবিত মানুষকে ঘিরেও ইসলামের নামে অনৈসলামিক কার্যকলাপ চলতে দেখা যায়। এদের একেক জনকে একেকরকম বাবা বলে সম্বোধন করে পীর হিসেবে মানা হয়। আমার মতে এদেরকে পীর বললে আব্দুল কাদের জিলানীকেই ছোট করে দেখা হবে। তথাকথিত বাবারা মোটেও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে না এবং অত্যন্ত নোংরা কাপড়-চোপড় পরে। তারা যে সমস্ত নোংরা কাপড় পরে তা পরে কোনোমতেই নামাজ পড়া সম্ভব নয়। অথচ কোনো পীরের জন্য নামাজ মওকুফ নয়। মুসলমানদের জন্য নামাজ একটি অত্যবশ্যকীয় বিষয়। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তিদেরও নামাজ মাফ নেই, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইসলামে স্পষ্ট বলা আছে-“কাফের এবং মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্যকারী হলো নামাজ”। যারা নামাজই পড়ে না তারা মুসলমানই নয়, পীর হওয়া তো পরের ব্যাপার। (চলমান)
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১২
মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস অসাধারন লেখনি, মুগ্ধতা রেখে গেলাম
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১২
তানি হক দেরিতে আসার জন্য ক্ষমা প্রার্থী ..গল্পটি পড়তে পড়তে একদম হারিয়ে গিয়েছিলাম ..খুব খুব ভালো লাগলো .. ভন্ড দের ভন্ডামি সামনে তুলে আনার জন্য ..ধন্যবাদ জানাই..কেননা আমরা অনেকেই এই ফাদে পা দিয়ে ফেলি ...ভাইয়া কে সালাম এবং অভিনন্দন !
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১২
এফ, আই , জুয়েল # বইয়ে আছে------" শস্যের চেয়ে টুপি বেশী , ধর্মের চেয়ে আগাছা বেশী " । আসলে ধর্মীয় মূর্খতাবাদ সকল অধর্মের মূল কারন ।=== কবিতার নাম চমক সহ সরল হলে ভালো হয় ।---৫
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১২
মামুন ম. আজিজ নামকরণ এক মহাবিপত্তির কাজ....নাম,কি কাব্যিক হলে ভালো, না কঠিন, না সরল? একটু পরামর্শ প্রয়োজন।
ভালো লাগেনি ১৬ জানুয়ারী, ২০১২
রনীল N/A UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# কেন আপনাকে গল্প কবিতার অন্যতম সেরা গল্পকার বলা হয়- সেটার প্রমান পেলাম। গল্পের শুরুটা যেভাবে করেছেন- তার জন্য বিশেষ দক্ষতার পাশাপাশি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির ও প্রয়োজন আছে... শুধু চোখেরই নয়, মনের ও... গল্পটি একনাগারে ঢিমেতালে লিখে যাননি, গবেষণা ও করেছেন। সে গবেষণার কারনে গল্প মোটেও ভারী হয়নি, বরং হয়েছে গতিময়... সবশেষে একটা অনুযোগ... আপনার গল্পের তুলনায় গল্পের নামকরনগুলো কিছুটা সাদামাটা, অনাকর্ষনিয় ধরনের মনে হয়... (বিরূপতা, স্থানান্তর, অজাজিত বিপত্তি)। এ ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি...
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১২
আসন্ন আশফাক সন্তানের জন্য মা বাবা অনেকসময় কুসংস্কার ও ভুলে যায়, চায় তার সন্তান সুস্থ হোক, ........ অনেক অনেক ভালো লাগলো গল্পটি
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "নগ্নতা”
কবিতার বিষয় "নগ্নতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মে,২০২৪